অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা ট্রেনের ব্যবস্থা


এক মাস দশ দিন হয়ে গেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ভারতে সম্পূর্ণভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে এবং সেটা করা হয়েছে মাত্র ৪ ঘণ্টার নোটিশে। ফলে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক যাঁরা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন, হাজার হাজার ছাত্র যাঁরা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পড়তে গিয়েছেন এবং শয়ে শয়ে পর্যটক যাঁরা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলেন, সময় মতো ফিরে আসবেন বলে কিন্তু আকস্মিকভাবেই লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় তাঁদের ফেরা হয়নি। ক্রমে ক্রমে তাঁদের থাকার, খাওয়ার এবং দৈনন্দিন নানান প্রয়োজন মিটিয়ে জীবনধারণ করা প্রায় অসহনীয় অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বহুবার চেষ্টা হয়েছে ধাপে ধাপে তাদের নানা জায়গায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার কিন্তু নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। হয়তো কখনো উত্তরপ্রদেশ সরকার আলাদা করে কয়েকশো বাসের ব্যবস্থা করেছে তাদের বাসিন্দাদের অন্য রাজ্য থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার, হয়তোবা রাজস্থান ব্যবস্থা করেছে তাদের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে নেওয়ার, কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই কেরালা বা পশ্চিমবঙ্গের মতন প্রত্যন্ত রাজ্যগুলি যেহেতু অন্য অনেক রাজ্যের উপর দিয়ে তাদের বাসের ব্যবস্থা করতে হবে চলাচলের জন্য, তাই সেটা করে উঠতে পারেনি। এখন প্রতিটি রাজ্যের চাপে এবং পরিযায়ী শ্রমিকরা অধৈর্য হয়ে নানান জায়গায় বিক্ষোভ দেখানোয়, জিনিসপত্র ভাঙচুর করায় অথবা পায়ে হেঁটে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা, এইসব কারণে ভারতীয় রেল তাদের জন্য আলাদা ট্রেনের ব্যবস্থা করতে রাজি হয়েছে। তবে প্রথমেই তারা একটা সমালোচনার কাজ করেছে। বলা হয়, এই শ্রমিকরা যখন ট্রেনে উঠবেন তখন তাঁদের কাছ থেকে কোনও ভাড়া নেওয়া হবে না। কিন্তু তাঁরা নিজের নিজের রাজ্যে পৌঁছলে রাজ্য সরকারই তাঁদের ভাড়া আদায় করে সেটা রেলকে দিয়ে দেবে, এই শর্তে রেল মন্ত্রক ট্রেন দিতে রাজি।

এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিরোধী দলগুলি, এমনকি বিজেপির সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী পর্যন্ত এর তীব্র সমালোচনা করেন। নিন্দা করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের একটি দফতর এইসব ক্লান্ত ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের কাছ থেকে, যাঁদের টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে, কোন সহায় সম্বল নেই, তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারে? অথচ প্রধানমন্ত্রীর প্রাণ ভান্ডারে যে কোটি কোটি টাকা জমা পড়ছে সেগুলো কোথায় যাচ্ছে, কী ভাবে তার সদ্ব্যবহার হচ্ছে বা হচ্ছে কিনা আমরা কেউ জানতে পারছি না। এমনকি এও বলা হয়েছে যে, হেলিকপ্টারে বা বিমানে করে হাসপাতালে পুষ্পবৃষ্টি করার বদলে শ্রমিকদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা অনেক বেশি মানবিক হতো। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে পড়ে রেল বলেছে, ট্রেন চালাতে যে খরচ হবে তার ৮৫% কেন্দ্র দেবে আর ১৫ শতাংশ শুধু রাজ্যগুলি দেবে। আজকেই উত্তর পশ্চিমে রাজস্থানের আজমির থেকে এবং দক্ষিণ ভারতের কেরালা থেকে দুটি ট্রেন পশ্চিমবঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের এবং আটকে পড়া ছাত্র ও পর্যটকদের ফেরত নিয়ে আসছে।

please wait

No media source currently available

0:00 0:02:58 0:00
সরাসরি লিংক


XS
SM
MD
LG