ভারত এই মাসের শুরুতে সাত জন রোহিঙ্গা পুরুষকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রথমবারের মত এই ফেরত পাঠানো, মিয়ানমারে অত্যাচার ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা মুসলমান সংখ্যালঘুদের মধ্যে প্রত্যাবাসনের গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভয়েস অফ আমেরিকার Anjana Pasrichaএর প্রতিবেদন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিশ্লেষন নিয়ে তাওহীদুল ইসলামের রিপোর্ট।
অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার বলেছে, দেশে বসবাসরত আনুমানিক ৪০,০০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
রোহিঙ্গারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেমন হরিয়ানার সবচেয়ে অনুন্নত জেলা Mewat এর একটি কাঁচা রাস্তার পাশের একটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা থাকেন।
এই ধরনের একটি ক্যাম্পে ৪৫টি পরিবার একটি পানির পাইপে পানি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করেন। শিশুরা একটি অস্থায়ী বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে এবং পুরুষরা নির্মান শ্রমীক হিসাবে কাজ করেন, যদি কাজ খুঁজে পান।
তারপরও কেউ অভিযোগ করেন না। ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছিলেন, এই ক্যাম্পে তারা প্রতিদিন কাজ না পেলেও মানিযে নিতে চাইছেন। কারন নিজের দেশে প্রতিনিয়ত যে ভয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তার পরিবর্তে গত ছয় বছর ধরে এই ক্যাম্প তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
কিন্তু রোহিঙ্গারা এখন আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন এই কারনে যে, কত দিন তারা এই ক্যাম্পকে বাড়ি বলতে পারবেন। এই ক্যাম্পের অনানুষ্ঠানিক প্রধান আলী জোহর। তিনি আতঙ্কিত এই কারনে যে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে সাতজন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো, আরো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পথ খুলে দিয়েছে।
এই ক্যাম্পের বাসিন্দারা আশা করছেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার তাদের refugee card বা উদ্বাস্তু বিষয়ক পরিচয়পত্র দেবে, যা তাদের দ্বিতীয়বারের মত স্থানচ্যুতি হওয়া থেকে থেকে রক্ষা করবে। ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক রোহিঙ্গার জাতিসংঘের নিবন্ধন রয়েছে।
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সাতজন রোহিঙ্গার জাতিসংঘের দেওয়া কার্ড ছিল না এবং তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসাবে আটক করা হয়েছিল।
ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, যারা বৈধ অনুমতি ছাড়া দেশটিতে প্রবেশ করেছে তারা অবৈধ অভিবাসী এবং রাজ্যগুলোকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক সংগ্রহ শুরু করার জন্য, যাতে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়।
নতুন দিল্লি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং সুপ্রীম কোর্টকে বলেছে, "কিছু রোহিঙ্গা পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো এবং অন্যান্য দেশে পরিচালিত ঐ একই ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে”।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা, ঐতিহ্যগত ভাবে উদ্বাস্তুদের প্রতি ভারতের সহনশীল নীতির পরিপন্থী।
শরণার্থীরা বলছেন, তারা এমন একটি ভূমি চান যেখানে তারা আশ্রয় এবং জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। আর এই চাওয়াকে সমর্থন করে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সমালোচনা করে বলেছে, শরণার্থীদের সেই সব দেশে ফেরত পাঠানো উচিত নয়, যেখানে তাদের নির্যাতিত হবার ভয় রয়েছে।